দি টাইমস নিউজঃ
ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কের কথা
উঠলেই চলে আসে বিএসএফ, ক্রিকেট,
ফারাক্কা, হিন্দি সিনেমা অথবা
বাংলাদেশীদের অবৈধভাবে
ভারতে প্রবেশের কথা। আমরা কখনো
কি চিন্তা করে দেখেছি ভারত
বাংলাদেশ থেকে কিংবা
বাংলাদেশ ভারত থেকে কি
পারিমান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে
থাকে? তাহলে জেনে নিন:
- ভারত, ''কানাডা, সিঙ্গাপুর, কুয়েত,
ফ্রান্স, ইটালি, সাউথ আফ্রিকা এমনকি
অস্ট্রলিয়ার'' থেকেও বেশি
রেমিটেন্স আয় করে বাংলাদেশ
থেকে।
- ২০১৩ সালে বিদেশে বসবাসরত
বাংলাদেশী শ্রমিকেরা সর্বমোট ১৪
বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা দেশে
পাঠিয়েছে। আর বাংলাদেশে কর্মরত
ভারতীয়রা ৪ বিলিয়ন ডলার এ দেশ
থেকে নিয়ে গেছে।
- ভারত যেসব দেশ থেকে সবচেয়ে
বেশি রেমিট্যান্স আয় করে সেই
তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান
পঞ্চম।
- ২০১২ ও ২০১৩ সালে ভারত সবচেয়ে
বেশি রেমিট্যান্স আয় করে সংযুক্ত
আরব আমিরাত থেকে। তালিকার
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্র, তৃতীয় সৌদি আরব, চুতর্থ
যুক্তরাজ্য ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে
বাংলাদেশ।
ভারত যেসব দেশ থেকে সবচেয়ে
বেশি রেমিট্যান্স (বিদেশে
কর্মরতদের পাঠানো অর্থ) আয় করে সেই
তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান
পঞ্চম। বাংলাদেশ থেকে ভারত বছরে
চার বিলিয়ন ডলার বা ৩১ হাজার
কোটি টাকা রেমিট্যান্স আয় করে।
গার্মেন্ট, টেক্সটাইল ও অনেক
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদসহ
বিভিন্ন ক্ষেত্রে কয়েক লাখ ভারতীয়
নাগরিক বাংলাদেশে কর্মরত
রয়েছেন। তাদের মাধ্যমে বাংলাদেশ
থেকে ভারত এ বিপুল পরিমাণ
রেমিট্যান্স অর্জন করছে।
২০১২ ও ২০১৩ সালে ভারত সবচেয়ে
বেশি রেমিট্যান্স আয় করে সংযুক্ত
আরব আমিরাত থেকে। তালিকার
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্র, তৃতীয় সৌদি আরব, চুতর্থ
যুক্তরাজ্য ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে
বাংলাদেশ।
২০১৩ সালে ভারত সংযুক্ত আরব
আমিরাত থেকে ১৪ বিলিয়ন মার্কিন
ডলার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১১
বিলিয়ন ডলার, সৌদি আরব থেকে ৮
বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাজ্য থেকে ৪
দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার এবং
বাংলাদেশ থেকে ৪ বিলিয়ন ডলার
রেমিট্যান্স আয় করেছে। প্রতিবেশী
অপর যে গরিব দেশটি থেকে ভারত
বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স আয় করে
নিয়েছে সেটি হলো নেপাল। ২০১২
সালে ভারত নেপাল থেকে ৩ দশমিক
২২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আয়
করেছে।
২০১৩ সালে ভারত মোট ৭০ বিলিয়ন
ডলার রেমিট্যান্স আয় করে প্রবাসে
কর্মরতদের কাছ থেকে।
গত ডিসেম্বর মাসে ভারতের দ্য
ইকোনমিক টাইমস পত্রিকায় এ বিষয়ক
একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এ
ছাড়া ভারতের আরো অনেক
গণমাধ্যমে মাঝে মধ্যে প্রকাশিত
রেমিট্যান্সবিষয়ক খবরে এসব তথ্য উঠে
আসছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের বরাত
দিয়ে গত বছর এপ্রিল, মে ও অক্টোবর
মাসে ভারতের বিভিন্ন পত্রিকায়
প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়, ভারত
২০১৩ সালে ৭০ বিলিয়ন ডলার
রেমিট্যান্স আয় করেছে এবং
রেমিট্যান্স আয়ের দিক দিয়ে
ভারতের অবস্থান বিশ্বে শীর্ষে। অবশ্য
হিন্দুস্তান টাইমসে গত অক্টোবর মাসে
বিশ্বব্যাংকের বরাত দিয়ে বলা হয়,
ভারত ২০১৩ সালে ৭১ বিলিয়ন ডলার
রেমিট্যান্স আয় করে এবং পরপর ছয়বার
বিশ্বে এ ক্ষেত্রে শীর্ষ স্থান দখল
করে।
প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ২০১৩ সালে
ভারত অপর যেসব দেশ থেকে বেশি
রেমিট্যান্স আয় করে সেসব দেশ হলো
ষষ্ঠ কানাডা তিন বিলিয়ন ডলার, সপ্তম
নেপাল সোয়া তিন বিলিয়ন ডলার,
অষ্টম ওমান ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার,
নবম কাতার দুই বিলিয়ন ডলার, দশম
শ্রীলঙ্কা ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার,
১১তম অস্ট্রেলিয়া ১ দমমিক ৩ বিলিয়ন
ডলার, ১২তম সিঙ্গাপুর ১ বিলিয়ন ডলার।
এ ছাড়া বাহরাইন, ইতালি ও
মালয়েশিয়া থেকেও দেশপ্রতি ১
বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি
রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে সেসব দেশে
কর্মরত ভারতীয়রা।
কয়েক বছর ধরে ভারত থেকে
ক্রমাগতভাবে অভিযোগ করা হচ্ছে সে
দেশে বিপুল বাংলাদেশী
অবৈধভাবে অবস্থান করছে। গত
নির্বাচনে বিজেপির অন্যতম ঘোষণা
ইস্যু ছিল তারা বিজয়ী হলে অবৈধ
বাংলাদেশীদের চিহ্নিত করে ভারত
থেকে বের করে দেয়া হবে। কিন্তু
২০১৩ সালের ২১ মে সিলিকন ইন্ডিয়া
নিউজ নামে একটি ওয়েবসাইটে
ভারতের রেমিট্যান্স অর্জনবিষয়ক
একটি খবরে উল্লেখ করা হয় উন্নয়নশীল
দেশ বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ লাখ
ভারতীয় লোক কর্মরত রয়েছে। সেই
রিপোর্টে ভারত থেকে নাগরিকদের
অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের
তথ্যও তুলে ধরা হয়েছে। তাতে বলা হয়,
ভারতের যেসব অঞ্চল থেকে
অবৈধভাবে লোকজন বাংলাদেশে
প্রবেশ করে সেগুলো হলোÑ পশ্চিমবঙ্গ,
মেঘালয়, আসাম, মিজোরাম ও
ত্রিপুরা। খবরটিতে সরকারি কর্তৃপক্ষের
বরাত দিয়ে বলা হয়, ভারতীয়
নাগরিকেরা বাংলাদেশের
গার্মেন্ট, টেক্সটাইলস ও বিভিন্ন
এনজিওতে কর্মরত রয়েছে।
গত ডিসেম্বর মাসে ভারতের
ইকোনমিক টাইমস পত্রিকায় ২০১২
সালে ভারত সবচেয়ে বেশি
রেমিট্যান্স অর্জন করেছে এমন শীর্ষ
২৫টি দেশের তালিকা প্রকাশ করে
মানচিত্রাকারে। ভারতের
রেমিট্যান্স অর্জনে অবদান রাখা ওই
২৫ দেশের মধ্যে শীর্ষ দশটি দেশ হলো
সংযুক্ত আরব আমিরাত ১৫ দশমিক ৬৮
বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১১ দশমিক ৯৬
বিলিয়ন ডলার, সৌদি আরব ৮ বিলিয়ন
ডলার, যুক্তরাজ্য ৪ দশমিক ২ বিলিয়ন
ডলার, বাংলাদেশ ৪ বিলিয়ন ডলার,
কানাডা ৩ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার,
নেপাল ৩ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার,
কুয়েত ২ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার, ওমান
২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার ও কাতার ২
দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার।
২০১৩ সালে বিদেশে বসবাসরত
বাংলাদেশী শ্রমিকেরা সর্বমোট ১৪
বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা দেশে
পাঠিয়েছে। আর বাংলাদেশে কর্মরত
ভারতীয়রা ৪ বিলিয়ন ডলার এ দেশ
থেকে নিয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদেশে কর্মরত
বাংলাদেশী শ্রমিকেরা রাস্তা
ঝাড়– দেয়া, বাগান, নির্মাণশিল্প ও
বিভিন্ন কারখানায় অত্যন্ত কঠোর
পরিশ্রম আর মানবেতর জীবনযাপন করে এ
অর্থ দেশে পাঠান। মরুর বুকে তীব্র
গরমে রাস্তা ঝাড়– দিয়ে অনেকে
দেশে টাকা পাঠান। আর ভারতের
বিপুলসংখ্যক নাগরিক এ দেশে
গার্মেন্ট টেক্সাটাইলসহ বিভিন্ন
প্রতিষ্ঠানে লাখ লাখ টাকা বেতনে
গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত রয়েছেন। একটি তথ্য
মতে, বাংলাদেশের গার্মেন্টে ২২
হাজার গুরুত্বপূর্ণ পদে ভারতীয়
নাগরিকরা কর্মরত।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক গত ৩
জানুয়ারি বাংলাদেশের অর্থনীতি
পর্যালোচনাবিষয়ক এক সংবাদ
সম্মেলনেও ভারতের রেমিট্যান্স
অর্জনে অবদানকারী দেশগুলোর
তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান
পঞ্চম বলে উল্লেখ করেছেন।
বাংলাদেশ থেকে বছরে ভারতের ৪
বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আয় করা
বিষয়ে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক
প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান নয়া
দিগন্তকে বলেন, মাঝারি স্তরে
আমাদের যথেষ্ঠ দক্ষ জনবল তৈরি হয়নি।
সেই সুযোগই নিচ্ছে ভারত। শুধু ভারত নয়
পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কারও বিপুল
নাগরিক বাংলাদেশে গার্মেন্টসহ
বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে
কর্মরত রয়েছেন। আমাদের উচিত মিড
লেভেলে দক্ষ জনবল সৃষ্টি করে
পরনির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা। তাতে
আমাদের উৎপাদন খরচও অনেক কমবে।
প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,
পাঁচ লাখ ভারতীয় এখানে কাজ করছে
এ তথ্য কতটা সঠিক তা আমার জানা
নেই। তবে সরকারের উচিত সঠিক
সংখ্যা বের করা। শুধু ভারত নয় অন্যান্য
দেশেরও কত লোক এখানে কাজ করছে
তারও সঠিক তথ্য আমাদের জানা
থাকা উচিত।
ভারতের মিনিস্ট্রি অব ওভারসিস
ইন্ডিয়ান অ্যাফেয়ার্সের তথ্য মতে,
২০১২ সালে দুই কোটি ১৯ লাখ ভারতীয়
বিভিন্ন দেশে কর্মরত ছিল। ২০১২
সালে সৌদি আরবে ১৭ লাখ ৮০
হাজার, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১৭
লাখ ৫০ হাজার ভারতীয় নাগরিক
কর্মরত ছিল।
বিশ্বব্যাংকের গত এপ্রিল মাসের
প্রতিবেদনে বলা হয় ২০১৩ সালে
বিশ্বে শীর্ষ রেমিট্যান্স আয়ের দেশ
ছিল ভারত। তারা দেশে নিয়েছে ৭০
বিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয় স্থানে ছিল
চীন ৬০ বিলিয়ন ডলার, তৃতীয়
ফিলিপাইন ২৫ বিলিয়ন ডলার, চতুর্থ
মেক্সিকো ২২ বিলিয়ন ডলার, পঞ্চম
নাইজেরিয়া ২১ বিলিয়ন ডলার, ষষ্ঠ
মিসর ১৭ বিলিয়ন ডলার, সপ্তম
পাকিস্তান ১৫ বিলিয়ন ডলার, অষ্টম
বাংলাদেশ ১৪ বিলিয়ন ডলার, নবম
ভিয়েতনাম ১১ বিলিয়ন ডলার দশম
ইউক্রেন ১০ বিলিয়ন ডলার।
(ধন্যবাদ) পোষ্টটি পরার জন্য....
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন