আমরা যে ডিভাইসগুলো ব্যবহার করি, ল্যাপটপ বা স্মার্টফোন - যাই হোক, এগুলোর
অফিশিয়াল বা অরিজিনাল ব্যাটারি গুলোর বাজার দর কিছুটা বেশিই হয়ে থাকে।
এজন্যে আমরা অনেকেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই দাম এড়িয়ে যাবার জন্য অরিজিনাল
ব্যাটারি না কিনে সহজ রাস্তায় হাটতে গিয়ে বাজারের অন্যান্য সব প্রতিষ্ঠানের
ব্যাটারি কিনে থাকি। আর ভুলটা করি এখানেই! আপনি হয়তো কিছুটা দাম কমিয়ে এখন
বিজয়ীর হাসি হাসছেন কিন্তু এই থার্ড-পার্টি ব্যাটারির কারণে আপনার এই হাসি
চিরস্থায়ী নাও হতে পারে। অনেক পর্যবেক্ষন করে জানা গিয়েছে, যত গুলো ডিভাইস
সংক্রান্ত দূর্ঘটনা এ পর্যন্ত ঘটেছে সেগুলোর বেশির ভাগ ঘটেছিল এই সকল থার্ড-পার্টি
ব্যাটারির কারণে।
আপনি খেয়াল করলেই দেখতে পারবেন, যেখানে একটি ল্যাপটপের অফিশিয়াল
ব্যাটারির দাম হয় ৬-৭ হাজার টাকার মত সেখানে আফটার মার্কেট ব্যাটারির মূল্য
সর্বোচ্চ ৩ হাজার বা ৩৫০০ টাকার মত হয়ে থাকে, আপনার মনে কি কখনোই প্রশ্ন
জাগেনি, 'এত সস্তায় তারা কীভাবে ব্যাটারি বাজারজাত করছে?'
সস্তার তিন অবস্থা!
চলুন, বাজারে পাওয়া সস্তা ব্যাটারি গুলোর কিছু ভয়ানক সত্য কাহিনী শোনা যাক।
২০১৩ সালে একটি ১৮ বছরের মেয়ের পকেটে একটি স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৩ ডিভাইস
এক্সপ্লোড হয় এবং মেয়েটিকে 'থার্ড-ডিগ্রী বার্ন' মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পরে
অনুসন্ধান করে জানা যায় যে ডিভাইসটিতে স্যামসাং এর অরিজিনাল ব্যাটারি ছিল
না, ছিল থার্ড-পার্টি একটি ব্যাটারি। মজার বিষয় হচ্ছে, সেই থার্ড-পার্টি ব্যাটারির
উপরে স্যামসাং এর লোগোও ব্যবহার করা হয়েছিল।
অন্যদিকে শুধুমাত্র যে অজনপ্রিয় প্রতিষ্ঠানের সস্তা ব্যাটারিতেই সমস্যা দেখা
গিয়েছে তাও নয়। প্রায় ১৩টি ব্যাটারি জনিত সমস্যার রিপোর্ট পাওয়ার পর ২০১৩
সালের জুনে বেস্ট বায় প্রতিষ্ঠানটি ম্যাকবুকের প্রায় ৫০০০ ব্যাটারি বাজার থেকে
তুলে নেয়। সেই রিপোর্ট গুলোর মধ্যে একজন সবচাইতে ভয়াবহ ঘটনা ছিল একজন ভোক্তার
পা পুড়ে যাওয়ার ঘটনাটি।
আপনি যদি ভাবেন যে পরিচিত দোকান থেকে সস্তায় ব্যাটারি কিনলে অন্তত তারা
আপনাকে খারাপ পণ্য সরবারহ করবে না তবুও আপনি ভূল করছেন। একটি ব্যাটারির
অভ্যন্তরীণ সমস্যা থেকে থাকলে তা সেলস পারসনের জানার কথা নয়! মূল
প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মান ঠিক করতে একটি ভালো স্ট্যান্ডার্ডে তাদের বাজার
রক্ষা করতে গিয়ে প্রোডাক্টের গুণগত মান ঠিক রাখার চেষ্টা করে, ফলে মূল্য বেশি হয়।
কিন্তু, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো সকল শ্রেনীর ভোক্তার কাছে পৌছানোর উদ্দেশ্যে
যতটা সম্ভব কম মূল্যে ব্যাটারি প্রস্তুত করতে চেষ্টা করে। ফলে ক্ষুণ্ণ হয় ব্যাটারির গুণগত
মানও।
ব্যাটারিতে আগুন ধরার কারণ
বর্তমানের আধুনিক ডিভাইস গুলোতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয় লিথিয়াম
আয়ন (Li-ion) ব্যাটারিসমূহ। লিথিয়াম ব্যাটারির গলে যাবার একমাত্র কারণই মূলত
'তাপমাত্রার অধিকত্য'। যখন এই ব্যাটারিগুলো অতিরিক্ত গরম হয়ে যায় তখন এর মধ্যে একটি
ধনাত্নক ফিডব্যাকের লুপ সৃষ্টি হয় যার কারণে এটি আরও বেশি উত্তপ্ত হতে শুরু করে।
এভাবে লুপ চলতেই থাকে এবং ব্যাটারির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং এভাবে
বৃদ্ধি পেতেই থাকে যতক্ষণ না পর্যন্ত ব্যাটারিতে আগুন না ধরে যায় বা বিস্ফোরিত
না হয়।
এছাড়াও, InfoWordl এর মতে 'ব্যাটারি জনিত সমস্যাগুলো যেমন, আগুন ধরে যাওয়া, ধোঁয়ার
সৃষ্টি করা, বিস্ফোরণ ইত্যাদি হতে পারে শর্ট-সার্কিট, এক্সেসিভ হিট, ওভার চার্জিং
অথবা অ্যাবিউস করার কারণে।'
আর যেহেতু অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো সব স্তরের ভোক্তার বাজার ধরার জন্য সস্তা উপকরণ
দিয়ে ব্যাটারি সমূহ বাজার জাত্ করে থাকে তাই ব্যাটারি গুলোর অভ্যন্তরীণ কম্পনেন্ট
গুলো সহজেই দৃঢ়তা হারিয়ে ব্যাটারি তথা ডিভাইসকে ক্ষতিগ্রস্থ করে ফেলতে পারে।
অন্যান্য সমস্যাঃ
ধরুন, আপনার কেনা সস্তা ব্যাটারিতে আগুনও ধরলো না আবার এটি বিস্ফোরিত্
হলোনা। তবে আপনি নিজে একটু লক্ষ্য করলেই দেখবেন এই সস্তা ব্যাটারিটি আপনার
চাহিদা পূরণে সক্ষম হচ্ছে কিনা। চার্জ কম থাকা, চার্জ হতে বেশি সময় নেয়া,
অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়া - ইত্যাদি সমস্যাগুলো খুবই কমন এই সস্তা ব্যাটারি গুলোর
ক্ষেত্রে। আর এখানে সেই প্রবাদটি বলতে গেলে পারফেক্ট, 'সস্তার তিন অবস্থা'।
আপনি এই সস্তা ব্যাটারি গুলো যে কোন মার্কেটে পাবেন; এমনকি ই-বে তে সার্চ
করলেও আপনি এগুলো পেয়ে যাবেন সহজেই এবং অবশ্যই অত্যন্ত আকর্ষনিয় মূল্যে। এমনকি
বিক্রেতারাও নকল লোগো থেকে ডাটা প্রদর্শন করবে তা আপনার কাছে ভালো
উপস্থাপন করার উদ্দেশ্যে। এই সস্তা ব্যাটারির সবচাইতে ভালো ট্রিক হচ্ছে গায়ের
উপরে লেখা ক্যাপাসিটির সাথে এর ভেতরের ক্যাপাসিটির মিল না দেয়া' !!!! কয় জনই
আর খেয়াল করবে বলুন?
কী করা উচিৎ?
এখনও বুঝতে পারছেন না? সহজ কথা! প্রোডাক্ট যেটা ভালো, দাম তার একটু বেশিই! এখন
আপনিই বলুন, আপনি কম দামে পণ্য কিনে খারাপ সার্ভিস এবং বিস্ফোরণের অপেক্ষায়
থাকবেন নাকি বেশি দামে কিনে নিশ্চন্ত থাকবেন?
শেষ কথাঃ
সব কিছুতে যদি সস্তা খুঁজতে যান তবে আপনার চালাকির কারণে মাঝে-মধ্যে আপনিও
ঠকে যেতেই পারেন। আপনার নিরাপত্তাই আপনার কাছে সবার প্রথমে হওয়া উচিৎ। ১০০
টাকা সঞ্চয় করার জন্য যদি আপনাকে ১০ হাজার টাকার গচ্চা দিতে হয় তবে আপনি
ছাড়া সেই ক্ষতি কার হবে বলুন? যাই হোক, ঈদের কেনাকাটায় যদি আপনার একটি নতুন
ব্যাটারিও তালিকায় থেকে থাকে তবে অরিজিনাল ব্যাটারি কিনে নিরাপদ
থাকার চেষ্টা করুন। ভালো থাকবেন, প্রিয় টেকের সাথেই থাকবেন।
প্রজুক্তি ও নতুন বাংলাকে জানতে "টাইমস নিউজ বিডি" এর সাথেই থাকুন।
রবিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৫
যে সব কারণে সস্তা ব্যাটারি কেনা উচিৎ নয়
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন