মঙ্গলবার, ৯ জুন, ২০১৫

দেবিদ্বারে স্কুলগেইট থেকে তুলে নিয়ে ৪ ছাত্রকে পিটিয়ে জখম করলো সন্ত্রাসীরা : প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ বিদ্যালয়ের পরীক্ষা স্থগিত

টাইমস নিউজ ডেস্কঃ
কুমিল্লার দেবিদ্বারে ‘দেবিদ্বার রেয়াজ উদ্দিন মডেল
পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে আসা ৪ শিক্ষার্থীকে
গেইট থেকে তুলে নিয়ে বেধরক পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করেছ
একদল সন্ত্রাসী। ওই ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীর স্বজনেরা
‘কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক’ অবরোধ করে। প্রসাশনের হস্তক্ষেপে
এবং অপরাধীদের গ্রেফতারপূর্বক সুষ্ঠবিচারের আশ্বাস প্রদান,
সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের পরীক্ষা স্থগিতের মধ্য দিয়ে অবরোধ
প্রত্যাহার করা হলেও ওই ঘটনায় উপজেলা সদরে চরম উত্তেজনা
বিরাজ করছে। আহতদের দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য
কমপ্লেক্সে ভর্তী করা হয়েছে। অবরোধ চলাকালে সড়কের
দু’পার্শ্বে বিপুল সংখ্যক যান ও মালবাহী পরিবহন আটকে যায়,
ফলে নারী ও শিশুদের চরম দূভোগ পোহাতে হয়।
পুলিশ, স্থানীয় ও প্রত্যক্ষ দর্শীরা জানান, মঙ্গলবার সকালে
দেবিদ্বার পৌর এলাকার বানিয়াপাড়া গ্রামের মিজানুর
রহমান বাবুর্চি দু’পুত্র ‘দেবিদ্বার রেয়াজ উদ্দিন মডেল পাইলট
উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র মোঃ মাজহারুল ইসলাম,
দশম শ্রেণীর ছাত্র মোঃ মারুফ হোসেন, একই গ্রামের বাবুল
সরকারের পুত্র নবম শ্রেণীর ছাত্র সোহান সরকার ও মীর
হোসেন’র পুত্র অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র ফরহাদ হোসেন অর্ধবার্ষিক
পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে বিদ্যালয়ে ঢুকার সময় গেইট থেকেই
জাভেদ পাঠান ও ফারুকের নেতৃত্বে বিল্লাল, রাব্বী, মালি,
সবুজ পাঠান, বাবু পাঠান, অলি, নূরুন্নবী, সাইফুল, সোহেল,
সোহেল আহমেদ, সৈকত, জাকির, সুমন (হানিফ), জাভেদ,
সোহান, বাদল, ইমনসহ ১৫/২০জন সন্ত্রাসী তাদের রিক্সায় তুলে
নিয়ে দেবিদ্বার আলহাজ্ব জোবেদা খাতুন মহিলা কলেজ’র
সামনে বেধরক কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করে। স্থানীয়রা
তাদের উদ্ধার করে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে
ভর্তী করে। ওই ঘটনায় আহতদের স্বজনদের আহবানে
বানিয়াপাড়া গ্রামের অধিবাসীরা ঘটনার প্রতিবাদে দুপুর
১২টা থেকে ‘কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক’ অবরোধ করে রাখে।
প্রায় পৌনে এক ঘন্টা অবরোধ চলার পর দেবিদ্বার থানার
অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মিজানুর রহমান, উপ-পরিদর্শক আবু
ইউছুফ, উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুুরুল ইসলাম মজুমদারের নেতৃত্বে একদল
পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা
চালায়। পরে উপজেলা পরিষদ’র সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান
একেএম সফিকুল আলম কামাল, ব্যবসায়ি মনিরুল ইসলামসহ
এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিদের উপস্থিতিতে এবং পুলিশের
পক্ষ থেকে অপরাধীদের গ্রেফতার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির
আশ্বাসে অবরোধকারীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়।
আহত শিক্ষার্থী মোঃ মাজহারুল ইসলাম ও মোঃ মারুফ
হোসেন’র পিতা মোঃ মিজানুর রহমান বাবুর্চি জানান,
দেবিদ্বার গ্রামের আকামত আলী পাঠানের পুত্র জাভেদ
পাঠান (১৮) ‘দেবিদ্বার রেয়াজ উদ্দিন মডেল পাইলট উচ্চ
বিদ্যালয়’র ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র একই বিদ্যালয় ও বহিরাগত
বখাটেদের একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী দল নিয়ে বিদ্যালয়ের
শিক্ষার্থীদের অকারনে প্রায়ই মারধর করে আসছিল এবং
ছাত্রদের পকেটে থাকা টাকা পয়সা ছিনিয়ে নিয়ে যেত।
কেউ তার প্রতিবাদ করলে পরিনামে আরো বেশী মার খেতে
হত। তাই প্রতিবাদ করার সাহসও কারোর নেই। বিষয়টি প্রধান
শিক্ষকের নিকট অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পায়নি
শিক্ষার্থীরা। আমার দু’ছেলেসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীরা
পরীক্ষা দিতে গেলে তাদের ৪ জনকে তুলে নিয়ে
নির্মমভাবে কুপিয়ে এবং পিটিয়ে মারাত্মক আহত করে। ওই
ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও
জানান তিনি।
দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদ’র সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান
একেএম সফিকুল আলম কামাল বলেন, জাভেদ পাঠানের
অনৈতিক কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করতে যেয়ে বানিয়াপাড়া
গ্রামের শিক্ষার্থীরা গত দু’সপ্তাহে একাধিকবার হামলার
শিকার হতে হয়। ওই ঘটনায় দু’গ্রামের গন্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে
একাধিক সালিসে ঘটনা মিমাংসা করা হয়। অর্ধবার্ষিকী
পরীক্ষা চলাকালে গত ক’দিন ধরে সন্ত্রাসীরা
বানিয়াপাড়া গ্রামের শিক্ষার্থীদের হুমকী দিয়ে আসছিল।
আজ আবারো এ হামলা। বানিয়াপাড়া গ্রামের প্রায়
দু’শতাথিক শিক্ষার্থী ভীতসন্ত্রস্থ হয়ে বিদ্যালয়ে আসতে
হচ্ছে।
‘দেবিদ্বার রেয়াজ উদ্দিন মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের
প্রধান শিক্ষক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম সরকার জানান, জাভেদ
পাঠান সন্ত্রাসী প্রকৃতির ছেলে, সে অত্র বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ
শ্রেণীতে পড়লেও তার বয়স হবে ১৮ বছরের উপরে, ক্লাশ
কিংবা পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেনি কখনো। শিক্ষার্থীদের
অভিযোগের কারনে পরিচালনা পর্ষদকে বিষয়টি
জানিয়েছি। আজ বিদ্যালয়ে পরীক্ষার্থী কম হওয়ায় পরীক্ষা
স্থগিত ঘোষনা করতে বাধ্য হয়েছি।
দেবিদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোঃ মিজানুর
রহমান বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। অপরাধিদের গ্রেফতার পূর্বক
আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা করা হবে। পরীক্ষা চলাকালে
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় বিদ্যালয়ের আশপাশে পুলিশ
মোতায়েন থাকবে।
দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম
বলেন, শিক্ষার্থীদের উপর সন্ত্রাসী হামলা এবং হামলার
কারনে পরীক্ষা বন্ধ, সড়ক অবরোধের ঘটনায় দায়ি সন্ত্রাসীরা
যতবড় শক্তিধর হোকনা কেন, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন