বর্তমান বাজারে যেসকল
স্মার্টফোনগুলো পাওয়া যায় তাদের
মধ্যে তিনটি অপারেটিং সিস্টেমের
ফোন বেশি জনপ্রিয়। আইফোন,
অ্যান্ড্রয়েড এবং উইন্ডোজ। আবার যদি
এই তিনটির মধ্যে র্যাংকিং করা যায়
তবে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং
সিস্টেম বিশিষ্ট স্মার্টফোনই জয়
পাবে। আপনি কি জানেন অ্যান্ড্রয়েড
স্মার্টফোনগুলোর এত জনপ্রিয়তার
পেছনে ঠিক কোন কারণটি কাজ করে
থাকে? আমিই বলছি। অ্যান্ড্রয়েড
স্মার্টফোনগুলোর জনপ্রিয়তার পেছনে
মূলত সর্বোচ্চ কাস্টমাইজেশন অপশন,
সবচাইতে বেশি সংখ্যক অ্যাপ এবং এর
সহজলভ্যতাই কাজ করে থাকে। যত ধরণের
অপারেটিং বিশিষ্ট স্মার্টফোন
বর্তমান বাজারে পাওয়া যাচ্ছে
সেগুলোর মধ্যে সবচাইতে বেশি
অ্যাপলিকেশন অ্যান্ড্রয়েডের। কোন
ধরণের অ্যাপলিকেশন নেই
অ্যান্ড্রয়েডের জন্য! তাও আবার একই
ক্যাটাগরিতেই রয়েছে শত শত অ্যাপ
যার মধ্যে থেকে আপনার জন্য উপযুক্ত
অ্যাপলিকেশনটি আপনি সহজেই খুঁজে
পেতে পারবেন। আবার হাজার হাজার
অ্যাপ আছে বলেই যে ডেভেলপাররা
চুপ করে আছেন সেরকমও কিন্তু নয়। প্রায়
প্রতিদিনই ডেভেলপাররা তৈরি করে
আসছেন নতুন নতুন আইডিয়ার চমৎকার সব
অ্যাপলিকেশন। আর তাই ২০১৫ সালের
সেরা কিছু অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের
পর আবারো নতুন একটি ছোট্ট সিরিজ
নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হলাম
এবং তা হচ্ছে ২০১৫ সালের সেরা
কিছু অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন। চমৎকার
কিছু জনপ্রিয় অ্যাপলিকেশন নিয়ে
সাজাতে চেষ্টা করেছি ছোট্ট এই
সিরিজটি। আশা করি আপনাদের
ভালো লাগবে। চলুন তাহলে, শুরু করা
যাক।
ও হ্যাঁ, শুরু করার আগে আরও একটি বিষয়
মনে করিয়ে দেই। এই সিরিজের
প্রতিটি অ্যাপলিকেশনই আপনি
বিনামূল্যে গুগল প্লে স্টোর থেকে
ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। আর
যদি আপনাদের পছন্দ হয় তবে কিছু কিছু
অ্যাপলিকেশনের আবার প্রো বা
প্রিমিয়াম ভার্সনও পাবেন যাতে
আরও কিছু প্রিমিয়াম সুবিধা থাকবে।
Unclouded
আপনি নিশ্চয়ই জানেন বর্তমানে
রয়েছে অনেক রকম ক্লাউড স্টোরেজ
সুবিধা এবং সেগুলোর মধ্যে কিছু কিছু
ক্লাউড স্টোরেজ আবার বেশ জনপ্রিয়।
যেকোনো ডিভাইস এবং স্থানে দ্রুত
পার্সোনাল ফাইল বা ডকুমেন্টস এক্সেস
করার জন্য এই ক্লাউড সুবিধার জুড়ি নেই।
কিন্তু, সমস্যা হচ্ছে বর্তমানে দেখা
যায় একজন ব্যবহারকারী একই সাথে
বিভিন্ন ধরণের ক্লাউড সেবা ব্যবহার
করে থাকেন। যেমন ধরুন, আমিই গুগল
ড্রাইভ এবং ড্রপবক্স ব্যবহার করে থাকি।
এক্ষেত্রে আমি মাত্র দুটি ক্লাউড
স্টোরেজ সেবা ব্যবহার করি কিন্তু
অনেকেই আছেন অনেকগুলো ব্যবহার
করে থাকেন। এখন, ধরুন আপনার খুব দ্রুত
একটি ফাইল প্রয়োজন। সেই ফাইলটি
আপনি কোন না কোন অনলাইন ক্লাউড
স্টোরেজে আপলোড করে রেখেছেন
কিন্তু অনেকগুলো ক্লাউড সেবা ব্যবহার
করার ফলে আপনি মনে করতে পারছেন
না যে ঠিক কোন ক্লাউড স্টোরেজে
আপনি ফাইলটি রেখেছিলেন! সমস্যা,
তাই না? তবে এই সমস্যা থেকে
আপনাকে সহজেই সমাধান দিতে সক্ষম
Unclouded অ্যাপলিকেশনটি। এই
অ্যাপলিকেশনটি একই সাথে ড্রপবক্স,
গুগলড্রাইভ, জিমেইল এবং ওয়ান ড্রাইভ
সাপোর্ট করে থাকে। আপনি ইচ্ছে
করলেই এই অ্যাপলিকেশনটির মাধ্যমে
আপনার প্রিয় ক্লাউড স্টোরেজের সব
ডকুমেন্টস গুলো দেখতে পারবেন। শুধু
তাই নয়, এটি মূলত আপনাকে আরও
অ্যাডভান্স কিছু সেবা দিতে সক্ষম
যেমন, কোন ফাইলটি সর্বশেষ এডিট/
আপডেট করেছেন, ক্লাউড স্টোরেজের
কতখানি স্পেস আপনি ব্যবহার করেছেন,
একই ফাইল একের অধিক রয়েছে কি না
(ডুপ্লিকেট ফাইলস) এবং কোন কোন
ফাইলগুলো সবচাইতে বেশি জায়গা
দখল করছে ইত্যাদি তথ্য আপনার সামনে
প্রদর্শন করবে।
তবে একটা লিমিটেশন আছে এই চমৎকার
অ্যাপলিকেশনটির এবং তা হচ্ছে
যেহেতু অ্যাপলিকেশনটি ফ্রি, সেহেতু
আপনি ফ্রি ভার্সনে মাত্র দুটি
অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে পারবেন।
দুটির বেশি অ্যাকাউন্ট ব্যবহারের
ক্ষেত্রে আপনাকে এর
অ্যাপলিকেশনটির প্রিমিয়াম
ভার্সনটি আনলক করতে হবে। আপনি
প্রিমিয়াম ভার্সন আনলক করলে অবশ্য
যে শুধু বেশি অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে
পারবেন তাই নয়, সাথে আপনি পাবেন
অ্যাপলিকেশনটি পিন, প্যাটার্ন বা
পাসওয়ার্ডের সাহায্যে প্রোটেক্ট
করার সুবিধা, ডার্ক থিমসহ আরও কিছু
ফিচারস।
ডাউনলোড লিংক: গুগল প্লে স্টোর
Dreamstime
আপনার
তোলা ছবি
বিক্রি করুন
Deramstime অ্যাপলিকেশনটি যে শুধুমাত্র
ফ্রি তাই নয়, বরং এটি আপনাকে আরও
আপনার তোলা ছবি বিক্রি করার
সুযোগ দিয়ে আপনাকে আর্থিক ভাবে
লাভবান করতে সক্ষম। এখনকার যুগের
চমৎকার কনফিগারেশন যুক্ত
স্মার্টফোনগুলোর ক্যামেরা ইউনিট হয়
বেশ শক্তিশালী, এবং
ব্যবহারকারীদের চাহিদার উপর লক্ষ্য
রেখেই কিন্তু চমৎকার এই ক্যামেরা
ইউনিটগুলো স্মার্টফোনে যুক্ত হয়েছে
কালের বিবর্তনে। আর যেহেতু
ব্যবহারকারীদের চাহিদার উপরেই মূলত
এর আগমন তাহলে বোঝাই যায় যে মানুষ
সেলফোনে ছবি তুলতে ভালোবাসেন।
আপনিও নিশ্চয়ই ভালোবাসেন
সেলফোনে ছবি তুলতে? তাহলে সেই
ভালোলাগার কাজ থেকে যদি দু
পয়সা কামিয়ে নেয়া যায় তাতে
ক্ষতি কি বলুন? আর ঠিক এই কাজটিই
করে আসছে Dreastime অ্যাপলিকেশনটি।
এই অ্যাপলিকেশনটি মূলত আপনাকে
আপনার ছবিগুলো ড্রিমসটাইমের স্টক
ফটোগ্রাফি আর্কাইভে আপলোড করার
সুযোগ দিয়ে থাকে যেখানে লাখ
লাখ মানুষ আপনার ছবিগুলোকে
দেখতে সক্ষম হবে এবং কিনতে
পারবে। চমৎকার একটি আইডিয়া
তাইনা? শুধু যে আপনি ছবি বিক্রিই
করতে পারবেন এই অ্যাপলিকেশনটির
মাধ্যমে তা কিন্তু নয়, আপনি আপনি
আপনার আপনার ছবির সেলের ট্র্যাক
রাখতে পারবেন এবং এটি আপনাকে
কীভাবে আপনার ছবিটিকে
প্রেজেন্ট করলে তা বেশি বিক্রি
হবার সম্ভাবনা থাকে সেরকম কিছু
টিপস দিয়েও আপনাকে সাহায্য করবে।
ডাউনলোড লিংক: গুগল প্লে স্টোর
Drupe
আসলে চমৎকার এই অ্যাপলিকেশনটিকে
নিয়ে একটি ছোট আকারের আলাদা
রিভিউ করা সম্ভব এবং এর যতই প্রশংসা
করা যায় সবই মূলত সিম্পল এই
অ্যাপলিকেশনটি ডিজার্ভ করে। যাই
হোক, চমৎকার এই অ্যাপটি সম্পর্কে ছোট্ট
করেই কিছু বলি আপনাদের।
আপনার কন্টাক্ট লিস্টে অনেকেই
আছেন, তাইনা? কিন্তু লক্ষ্য করে
দেখবেন গড়ে একেক মানুষের সাথে
আপনি একেক ভাবে যোগাযোগ
করছেন। যেমন, আমার ক্ষেত্রেই ধরুন।
আমি কিছু ফ্রেন্ডের সাথে
যোগাযোগ করি ভাইবারে, আবার
কিছু ফ্রেন্ডের সাথে কথা হয় ফেসবুক
মেসেঞ্জারে, কাউকে দেই সেলুলার
নেটওয়ার্কের টেক্সট মেসেজ আবার
কাউকে দেই কল। এমন নয় যে যার সাথে
ভাইবারে যোগাযোগ হয় তাকে কখনও
ফোন দেয়া হয়না, তবে গড়ে দেখতে
গেলে দেখা যায় আমি বেশির ভাগ
সময়েই ভাইবারের বন্ধুগুলোর সাথে
ভাইবারের মাধ্যমেই যোগাযোগ
করছি। আর চমৎকার এই অ্যাপলিকেশনটি
আমাদের এই অভ্যাসটি দেখেই হয়তো
বানানো। Drupe -একই সাথে আপনার
কন্টাক্ট এবং মেসেজিং
অ্যাপলিকেশনগুলোকে ম্যানেজ করতে
সক্ষম। ড্রুপ অ্যাপলিকেশনটিতে আপনার
স্মার্টফোনের কন্টাক্ট গুলো থাকবে
স্ক্রিনের বামে এবং মেসেজিং বা
যোগাযোগের অ্যাপলিকেশন গুলো
থাকবে ডানে। আপনি শুধু আপনার
কন্টাক্টটি বের করে (যার সাথে
যোগাযোগ করতে চাচ্ছেন) ট্যাপ করে
সোয়াইপ করে কন্টাক্টটিকে ডান
পাশের যোগাযোগের মাধ্যমের উপর
(হতে পারে, মেসেঞ্জার, ভাইবার,
কল) ছেড়ে দিতে হবে। ব্যাস, খুব দ্রুত
সেই মানুষটির সাথে আপনার
নির্ধারিত যোগাযোগের
অ্যাপলিকেশনটির সাথে আপনি
কানেক্টেড হয়ে যাবে। আপনি চাইলে
অ্যাপলিকেশনটিকে আপনার স্ক্রিনের
যে কোন স্থানে এক্সেস দিতে
পারেন একটি ছোট্ট আইকন রাখার
যাতে করে যে কোন কাজ করার সময়
আপনি অ্যাপলিকেশনটি ব্যবহার করতে
পারেন। তাই আপনি যদি ইনস্ট্যান্ট
সবার সাথে বিভিন্ন মাধ্যমে
যোগাযোগ করে অভ্যস্ত হয়ে থাকেন
তবে আপনার জন্য এটা পারফেক্ট একটি
অ্যাপলিকেশন।
ডাউনলোড লিংক: গুগল প্লে স্টোর
Skype
হয়তোবা আপনার কাছে কিছুটা
প্রেডিক্টেবল লাগছে এবং কিছুটা
অদ্ভুতও! স্কাইপ, এত পুরাতন একটি
অ্যাপলিকেশন কীভাবে ২০১৫ সালের
সেরা অ্যাপলিকেশনের তালিকায়
রাখলাম? প্রথমেই বলে রাখছি, ২০১৫
সালের সেরা বলতে কিন্তু ২০১৫
সালে বাজারে আসা বুঝানো
হচ্ছেনা, ২০১৫ সালে এ পর্যন্ত কোন
অ্যাপ গুলো সবচাইতে বেশি জনপ্রিয়
তাই বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে এর
মাধ্যমে। যাই হোক, যোগাযোগের
অনেক অনেক মাধ্যম তৈরি হলেও এখনও
পৃথিবীর যে কারও সাথে, পৃথিবীর যে
কোন প্রান্ত থেকে বিনামূল্যে (মূলত
বিনামূল্যে বললে ভুল হয় কেননা
এক্ষেত্রে আপনার ইন্টারনেট দরকার,
এবং ইন্টারনেটেও আপনাকে মাসিক
একটা বিল দিতে হয়; তবে যেহেতু
ইন্টারন্যাশনাল রোমিং চার্জ অনেক
বেশি এবং আপনি ইন্টারনেট শুধু
স্কাইপের জন্য ব্যবহার করবেন না বরং
ইন্টারনেট আছে বলেই স্কাইপ ব্যবহার
করবেন - তাই সেই হিসেবে
বিনামূল্যেই, কি বলেন?) যোগাযোগ
করার সবচাইতে ভালো পন্থা হচ্ছে
স্কাইপ। ২০০৩ সালে যখন স্কাইপ
ইন্টারনেটের দুনিয়ায় আসে, গ্রাহকরা
ব্যবহার করা শুরু করে ঠিক তখন থেকেই
স্কাইপের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী, এবং
এতগুলো বছর পার হবার পরেও সেই
জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে
স্কাইপ সেবাটি। কর্মক্ষেত্রে যারা
রিমোটলি কাজ করেন এবং ডেইলি
বেসিসে হেড কোয়ার্টারের সাথে
যোগাযোগ রাখতে হয় তাদের জন্যেও
স্কাইপের জুড়ি নেই। অসাধারণ কিন্তু
সিম্পল এই অ্যাপলিকেশনটির মাধ্যমে
আপনি ভিডিও, ভয়েস কল এবং
মেসেজিং এর মাধ্যমে যোগাযোগ
করতে পারবেন। এছাড়াও আরও একটি
চমৎকার ফিচার রয়েছে এবং তা হচ্ছে
স্ক্রিন শেয়ার অপশনটি। অর্থাৎ, আপনি
ডেস্কটপে স্কাইপ ব্যবহার করার সময়
আপনার ডেস্কটপটিকে লাইভ প্রদর্শন
করতে পারবেন আপনার বন্ধুর সাথে।
চমৎকার একটি ফিচার তাইনা?
ডাউনলোড লিংক: গুগল প্লে স্টোর
শেষকথা:
ছোট্ট এই সিরিজের প্রথম পর্বে আজ
এতটুকুই থাক। সবই যদি আজই লিখে দেই
তাহলে তো আর আপনারা নতুন কিছুর
জন্য অপেক্ষা করে থাকবেন না। যাই
হোক, আগামী পর্বে আমার তালিকায়
থাকা নতুন কিছু অ্যাপলিকেশন নিয়ে
আপনাদের সামনে হাজির হবো।
ততদিনে ভালো থাকবেন।
খেয়াল করুন, ২০১৫ সালের বলতে আমি
এপর্যন্ত সকল জনপ্রিয় অ্যাপলিকেশনের
কথা বুঝিয়েছি, ২০১৫ সালেই নির্মিত
হয়েছে এরকম অ্যাপলিকেশনের কথা
বুঝাইনি।